সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ০৯:০০
মাওলানা সৈয়দ রুহুল আমিন

হাওজা / বাংলাদেশের নওগা অঞ্চলে এক অনুষ্ঠানে মাওলানা রুহুল আমিন মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য ও পিছিয়ে পড়া সমাজের অগ্রগতি বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা করেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মাওলানা রুহুল আমিন, বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজ আজ নানা সংকট ও বিভক্তির সম্মুখীন। একদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যহীনতা তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে অনেক মুসলিম দেশ ও সমাজ পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের প্রয়োজন ঐক্যের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং পিছিয়ে পড়া সমাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুদৃঢ় নীতি গ্রহণ করা।

মুসলিমদের আন্তর্জাতিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

১. কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐক্যের গুরুত্ব

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কুরআন ও হাদিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। মহান আল্লাহ বলেন:

"আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে (দড়ি) দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"মুসলিমরা এক দেহের মতো; যদি শরীরের একটি অংশ ব্যথা পায়, তাহলে পুরো শরীর তা অনুভব করে।" (বুখারি ও মুসলিম)

এই নির্দেশনাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে মুসলিমদের বিভক্তি ইসলামবিরোধী এবং একতা বজায় রাখাই ইসলামের মূল শিক্ষা।

২. বিভক্তির কারণসমূহ

জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ: অনেক মুসলিম দেশ নিজেদের জাতীয়তাবাদকে ইসলামের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, ফলে ঐক্য নষ্ট হচ্ছে।

মতপার্থক্য ও মাজহাবিক বিভাজন: বিভিন্ন মাজহাব ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব মুসলিম সমাজকে দুর্বল করছে।

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও উপনিবেশবাদ: বহিরাগত শক্তিগুলো মুসলিম দেশগুলোর বিভাজনকে উসকে দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক বৈষম্য: ধনী মুসলিম দেশ ও দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার অভাব।

৩. ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপায়

আন্তর্জাতিক সংহতি বৃদ্ধি: মুসলিম দেশগুলোকে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন-এর মতো সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

মতপার্থক্যের প্রতি সহনশীলতা: মাজহাব ও চিন্তাগত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে এগুলোকে ঐক্যের অন্তরায় করা উচিত নয়।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব বাড়ানো দরকার।

ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রচার: সহিংসতা ও উগ্রবাদের পরিবর্তে ইসলাম যে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়, তা প্রচার করা জরুরি।

পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার উপায়

১. আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি

ইসলামিক শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা বিস্তার করা দরকার।

মুসলিম বিশ্বে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দরকার।

২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরতা

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উন্নত করা দরকার, যাতে পিছিয়ে পড়া সমাজের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।

জাকাত ও ওয়াকফ ব্যবস্থার পুনর্জাগরণ: ধনী মুসলিমদের উচিত দরিদ্রদের জন্য কার্যকরভাবে জাকাত ও ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা করা।

৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ

নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়ন: নারীদের শিক্ষিত করা এবং যুবকদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা: সহনশীলতা, মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা প্রচার করা দরকার।

৪. পুরোনো ধারা ও ভাবাদর্শ রক্ষা করার গুরুত্ব

ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও নৈতিকতাকে ধরে রাখা দরকার।

ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে।

পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসলামিক সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা দরকার।

উপসংহার

মুসলিমদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং পিছিয়ে পড়া সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। পুরোনো ধর্মীয় শিক্ষা ও ইসলামের মূল ভাবাদর্শকে আঁকড়ে ধরে রেখে আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেই মুসলিম উম্মাহ আবারো সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha